টাইম ম্যানেজমেন্টের কলাকৌশল

মুখবন্ধ

১৯৫০ সাল থেকে বাড়িঘর এবং কর্মক্ষেত্রের কাজগুলো ধীরে ধীরে যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হতে লাগল। এই ইলেকট্রনিক্স বিপ্লবের ফলে মানুষজন ভবিষ্যদ্বাণী করল যে ২০০০ সালের মধ্যে প্রত্যেক মানুষ সপ্তাহে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ঘণ্টা কাজ করবে। তখন এত বেশি অবসর সময় থাকবে যে মানুষ এটা নিয়ে চিন্তা পড়ে যাবে যে এত অবসর সময় দিয়ে করবে কী!

অবশ্য, এখন আমরা এটা জানি যে ৫০ দশকের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মানুষের কর্মঘণ্টা তো কমেইনি বরং বেড়েছে। ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে কাজের গতি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে মানুষ এখন এর সাথে গতি মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে এত বেশি কাজের চাপ এবং তথ্যের বন্যা বইছে যে বেশিরভাগ মানুষকে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। আর দেখা যাচ্ছে, আমাদের অবসরের সময়ও কমে আসছে। কম্পিউটার চিপ তো আমাদের মুক্ত করেনি; বরং এটা আমাদেরকে বাধ্য করছে এর গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে।

তাই বলা যায়, আমরা এখন দায়িত্বের অতিরিক্ত বোঝা নিয়ে হেঁটে চলছি। ফ্যাক্স, ফেডারেল এক্সপ্রেস এবং ইমেইলের কাজগুলো তাৎক্ষণিক করা চাই। কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার থেকে প্রতি মিনিটে ৫০টি চিঠি প্রিন্ট হতে পারে যা আগে একজন সেক্রেটারির জন্য সারাদিনের কাজ ছিল। ফলস্বরূপ, আমাদের মেইলবক্স এবং কাজের ফাইলপত্র নানা ধরনের উপকরণ দ্বারা উপচে পড়ছে। যার সবকিছুই আমাদের মনোযোগ দাবি করছে।

এ সমস্ত যোগাযোগ ও ভ্রমণের ফলাফল হচ্ছে আপনি এখন যাদের সাথে কাজ করেন তাদের নেটওয়ার্ক বা পরিচিতির গণ্ডি বেড়ে চলছে। যারা আপনার সময়ের একটা বড় অংশ দাবি করে। বলতে গেলে, আপনি বর্তমান সময়ে এক বছরে যত মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন, আপনার দাদা-দাদী তাদের সারাজীবনেও এত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেনি। আপনি বরং তাদের সারাজীবনের পরিচিতির গণ্ডির চেয়েও বেশি মানুষের সাথে মাত্র এক বছরেই দেখা-সাক্ষাৎ করেন। স্বাভাবিক, এজন্যই আমরা এখন অনেক মানুষের নাম মনে রাখতে পারি না। মানুষের নাম মনে রাখতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

ব্যাপারটা আরও খারাপ হয়ে দাঁড়ায়, যখন আপনি এসব ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য একটি টাইম ম্যানেজমেন্ট বইয়ের পাতা উল্টান। এমন এক বই যেখানে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, আপনাকে নিজের আশেপাশে এক ধরনের দেয়াল গড়ে তুলতে হবে যাতে করে বিশৃঙ্খল কোনকিছু আপনাকে বিরক্ত না করতে পারে বা অতিদক্ষ কোন প্রতিযোগীকে আটকানো যায়। এ ধরনের যুক্তিসঙ্গত প্রচীর গড়ে তোলা হয়তো স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। সেসব বইয়ের লেখকরা হয়তো আপনাকে একটি বদ্ধ জায়গায় নিজেকে বন্দী করে ফেলতে বলছে। এ ধরনের আবদ্ধ দেয়াল ঘেরা শীতল, ছকবদ্ধ ও ছোট্ট পরিষ্কার পরিবেশে কী আপনি সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনার কলাকৌশল প্রয়োগ করতে পারছেন?

মানুষের জীবন কী বক্সবন্দী হয়ে জীবনযাপন করার জন্য! যাই হোক, এটা তো আপনিই ভালো জানেন।

এ ধরনের জীবনযাপন করতে গিয়ে আপনি হয়তো প্রায়ই ক্লান্ত, পরাজিত বোধ করেন। আপনি হয়তো সময় ব্যবস্থাপনার হতাশ হয়ে পড়েছেন। আর চিন্তা করছেন, এ বিষয় নিয়ে আরেকটি বই পড়া মানে সময়ের অপচয় হবে না তো! কিন্তু না, এ বই তা নয়। এখনো আশা আছে। আর সেই আশার আলো নিয়েই এ বই রচিত।
























ফজলে রাব্বি

ফজলে রাব্বি একজন লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক, যিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে তার অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি সাফল্য প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদকের ভূমিকায় থেকে প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বাংলা অনুবাদে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। তার অনুবাদ করা বইগুলো যেমন "থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ," "দ্য সাইকোলজি অফ মানি," এবং "টাইম ম্যানেজমেন্ট" বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করাই তার অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, তিনি সাহিত্যিক কাজেও সমান উৎসাহী, যেখানে তার কবিতাগুলো মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার গভীর দিকগুলো তুলে ধরে। ফজলে রাব্বি প্রতিনিয়ত পাঠকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশের তার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয়, মানসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন উদ্ভাবনী প্রকাশক ও লেখক হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন