দূরদর্শী চিন্তা করতে এই ৭টি সূত্র মেনে চলুন

Thanks for picture: https://practicalanalyst.com/visionary-leadership-and-you/

নেতারা অগ্রিম চিন্তা করে। বেশিরভাগ নেতা চিন্তার জগতে ভবিষ্যতে বসবাস করে। নিয়মিতভাবে তারা তাদের চিন্তাকে ভবিষ্যতের দিকে নিবদ্ধ রাখে। কী হতে পারে এবং কেমন করে তা সৃষ্টি করা যায়—সেই বিষয়গুলো নিয়ে নেতারা চিন্তা করে। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বর্তমান ও অতীতের দিকে লক্ষ রাখে। অগ্রিম চিন্তাশীল হওয়ার অর্থ হলো একগুচ্ছ লক্ষ্য ঠিক করা এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্যগুলোর দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতি মনোযোগ দেওয়া।

নেতারা লক্ষ্যসমূহ অর্জন করার জন্য নিম্ন লিখিত ৭টি সূত্র মেনে চলুন:

১। প্রধান লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করুন

সুনির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি কী অর্জন করতে চান, তা আপনার ব্যবসার জন্য হোক বা জীবনের জন্য। পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যাবশ্যকীয়।

২। লক্ষ্যগুলো লিখে রাখুন

নির্দিষ্ট এবং বিস্তারিতভাবে লক্ষ্যসমূহ লিপিবদ্ধ করুন। গণণা করা যায় তেমনভাবে লক্ষ্যগুলো লিখুন। একটি উদাহরণ দিই, আপনার লক্ষ্য হলো আগামী দুই বছরের মধ্যে আপনার বিক্রি দ্বিগুণ করা। সুতরাং সেই লক্ষ্য লিখে রাখুন। যদি আপনার লক্ষ্য লিখিত না থাকে, তা অস্পষ্ট কল্পনার চেয়ে বেশি কিছু নয়।

৩। লক্ষ্য অর্জন করার জন্য একটি ডেডলাইন তথা সময়সীমা নির্ধারণ করুন

যদি আপনার লক্ষ্য হয় বড় কিছু অর্জন করা, তাহলে সেটাকে ছোট ছোট আকারে ভাগ করুন এবং প্রতিটি অংশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডেডলাইন নির্ধারণ করুন। আমরা প্রবলভাবে ডেডলাইন থাকা লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে তৎপর থাকি। নিজেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডেডলাইন তথা সময়সীমা দিন।

৪। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য করণীয় বিষয়সমূহের তালিকা তৈরি করুন

সমন্বয়কারী হোন। যদি আপনি অনেক বিষয় নিয়ে ভাবেন, তবে আপনার তালিকায় সেগুলো যোগ করুন যতক্ষণ না তালিকা সম্পূর্ণ হয়।

৫। কাজের পরিকল্পনা তৈরি করুন

আপনার তালিকা নিয়ে বসুন এবং নির্দিষ্ট ধাপে পরিবর্তন করুন। দুটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে: অগ্রাধিকার ও ধারাবাহিকতা। তালিকার কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? প্রথমে কী করা আবশ্যক? অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরির পর ৮০/২০ সূত্র মনে রাখতে হবে: আপনার সম্পাদনকৃত কাজের শতকরা ২০ ভাগ আপনার কাজটার ৮০ ভাগ ফলাফলের জন্য দায়ী। আপনি অপ্রয়োজনীয় কাজে নিজের সময় নষ্ট করতে চাইবেন না। আপনি চাইবেন না আপনার সহকর্মী বা কর্মচারীরা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করুক। আপনার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে কোন বিষয় সত্যিকার অর্থেই উপকারী তা চিহ্নিত করুন। ধারাবাহিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে আপনাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে যে, কোন কাজের আগে কোন কাজ করবেন। যেকোন পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করার বিষয়টা অন্যান্য নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পাদনের উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে সীমাবদ্ধতা, চাপ এবং বাধাগুলোও চিহ্নিত করুন। এক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। কোনগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাধা? আপনার লক্ষ্য অর্জনের পূর্বে কোন সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে হবে?

৬। কাজ আরম্ভ করুন

এখন আপনার কাছে একটি পরিকল্পনা আছে এবং আপনি জানেন যে চলার পথে আপনার সামনে কোন বাধাগুলো রয়েছে, আপনাকে কাজ শুরু করতে হবে—তাৎক্ষণিকভাবে। আর দেরি করা যাবে না। অনেক লোক ব্যর্থ হয় কারণ তারা নিজেদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে না। নেতারা সেই ভুল করে না।

৭। প্রতিদিন কিছু কাজ করুন

আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, দিনের পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং তারপর কিছু করুন, যেকোনো কিছু যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে নিবে।

পিটার ড্রুকার বলেন, ‘নেতার দায়িত্ব হলো ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা।’ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানার তথা পূর্বপরিকল্পনায় পারদর্শী মাইকেল ক্যামি বলেন, ‘যারা ভবিষ্যতের চিন্তা করে না, তারা কিছুই পায় না।’ লেখক এবং ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অ্যালেক ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো ভবিষ্যৎকে নির্মাণ করা।’ নেতারা লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে এবং সামনের দিকে অগ্রসর হয়। তারা ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়, প্রতিদিন কাজ করে। তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে ধীরে ধীরে পা বাড়ায়।

তথ্যসূত্র: লিডারশিপ, ব্রায়ান ট্রেসি, অনুবাদ ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০১৭।
ফজলে রাব্বি

ফজলে রাব্বি একজন লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক, যিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে তার অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি সাফল্য প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদকের ভূমিকায় থেকে প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বাংলা অনুবাদে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। তার অনুবাদ করা বইগুলো যেমন "থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ," "দ্য সাইকোলজি অফ মানি," এবং "টাইম ম্যানেজমেন্ট" বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করাই তার অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, তিনি সাহিত্যিক কাজেও সমান উৎসাহী, যেখানে তার কবিতাগুলো মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার গভীর দিকগুলো তুলে ধরে। ফজলে রাব্বি প্রতিনিয়ত পাঠকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশের তার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয়, মানসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন উদ্ভাবনী প্রকাশক ও লেখক হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন