আত্ম-উন্নয়ন: বেকারত্বের যুগে আশার ব্যবসা


দ্রুতগতির ও তাৎক্ষণিক সাফল্যের যুগে আপনি আর কঠোর পরিশ্রম করতে বা চিন্তা করতে বাধ্য নন—শুধু হাসুন, ইতিবাচক শক্তিকে আকৃষ্ট করুন, আর দেখবেন টাকা যেন যাদুর মতো আপনার ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে যাচ্ছে! আত্ম-উন্নয়নমূলক বইগুলো এখন ফাস্ট ফুডের মতো হয়ে গেছে—সহজলভ্য, সহজপাচ্য, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার ক্ষুধার্ত করে তোলে। এসব বইয়ের শিরোনামে ৭ দিনের মধ্যে সম্পদ ও সুখের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যেন আপনি আলাদিনের জাদুর প্রদীপ হাতে নিয়ে কোন প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন!


বইয়ের দোকানগুলোতে ঝলমলে সব শিরোনামের বইয়ের ছড়াছড়ি—

“মাত্র ৫টি ধাপে সাফল্য অর্জন করুন,”

“আপনিই পরিবর্তন করতে পারেন আপনার জগৎ,”

“কীভাবে পুরো বিশ্বকে আপনার পক্ষে কাজে লাগাবেন!”

এ যেন জীবন একটি দাবার খেলা, আর ভাগ্য শুধু পাঁচ তারকা হোটেলের রিসেপশনিস্ট!


সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের অনবরত প্রচার চলছে—

— “সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠুন, ধ্যান করুন, এক গ্লাস গরম পানি পান করুন, আর মহাবিশ্বকে কৃতজ্ঞতা জানান!”

— “ইতিবাচক চিন্তা করুন, আপনার উপর টাকা যেন বৃষ্টির মতো ঝরবে!”

— “আপনিই আপনার সাফল্যের কারণ, আবার ব্যর্থতারও—অন্য কাউকে দোষ দিবেন না!”


প্রিয় পাঠক, আপনি কি বেকার? গরিব? ঋণের বোঝায় জর্জরিত?

তাহলে অর্থনীতি, রাজনীতি বা সরকারি সিস্টেম বা কাঠামোগত বেকারত্বকে দোষ দিবেন না—বরং নিজেকেই প্রশ্ন করুন: “আমি আমার দেশের জন্য কী করেছি?” দেশের সরকার যে আপনাকে দক্ষ করে গড়ে তুলছে না, নিজের দায়িত্ব পালন করছে না, জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ধার ধারছে না, সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন করার কোন তাগিদ নেই।


আত্ম-উন্নয়ন: অর্থনৈতিক প্রতিভা নাকি এ এক অভিনব প্রতারণার কৌশল?

উপর থেকে দেখলে আত্ম-উন্নয়ন ব্যাপারটা একটা নিরীহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক আইডিয়া বলে মনে হতে পারে, যার লক্ষ্য ব্যক্তিগত দক্ষতা ও মানসিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা। কিন্তু একটি চমকপ্রদ তত্ত্ব বলে যে এই সামষ্টিক আত্ম-উন্নয়ন নিয়ে উন্মাদনাটি আসলে আধুনিক নব্য-উদারনীতিবাদী (modern neoliberalism) অর্থনীতিরই ফসল—যে দার্শনিক আইডিয়া মনে করে, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব সামাজিক সমস্যা নয়; বরং নিছক ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ!


একবার ভাবুন তো, আত্ম-উন্নয়ন যদি সরকারগুলোর ব্যর্থতার দায় এড়ানোর অজুহাত হয়ে ওঠে?

বেকারত্ব সংকট মোকাবিলার কোন পদক্ষেপ আছে কি? বেকারত্ব সমস্যা দেখা দিলে সরকার শুধু বলবে,

— কোনো সমস্যা নেই—একটা বই ছেপে দাও, শিরোনাম দিবে: “ডিগ্রি বা দক্ষতা ছাড়াই ২৪ ঘণ্টায় চাকরি পাওয়ার সহজ উপায়!”

চরম দারিদ্র্য?

— কোনো চিন্তা নেই—নিজেকে কোটিপতি ভাবুন, দেখবেন আপনার কল্পনাশক্তির সামনে অর্থনৈতিক সিস্টেম ধ্বসে পড়ছে!


দর্শন ও সাহিত্য কোথায় গেল?

আত্ম-উন্নয়নমূলক বইগুলো বইয়ের দোকান দখল করার আগে মানুষ সাহিত্য, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান পড়ত—যেখানে বিশ্বের সমস্যাগুলোকে গভীর দৃষ্টিতে এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা হতো, “৭টি গোপন কৌশলে অসাধারণ সাফল্য অর্জনের রহস্য!” শীর্ষক কোন সরলীকৃত চশমার মধ্য দিয়ে নয়!

জীবনের গভীর শিক্ষাগুলো লুকিয়ে আছে ছোট ছোট গল্পে! অবজারভেশন: এভরি ম্যান হিজ ওউন ইউনিভার্সিটি বইটি আপনাকে নিজেকে জানার এবং জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি দিবে। প্রতিটি গল্প আপনার হয়ে উঠবে আপনার ব্যক্তি জীবনের শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়—পড়ুন, শিখুন এবং নিজেকে আবিষ্কার করুন! বইটই ডটকমে বইয়ের লিংক: https://boitoi.com.bd/book/7259/%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%A8-:%E0%A6%8F%E0%A6%AD%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%9C-%E0%A6%93%E0%A6%89%E0%A6%A8-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF


তথ্যসূত্র: ফাতমা হিকমাত হাসান, https://www.facebook.com/mar.english.33/posts/pfbid06GKVQ3RttrGEH4m8VTB1yiv72PNHghxETtacBWXAXJQJMyN8dW35BKdKUyGNMkgel, লেখাটি পুনর্লিখন করেছেন ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

ফজলে রাব্বি

ফজলে রাব্বি একজন লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক, যিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে তার অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি সাফল্য প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদকের ভূমিকায় থেকে প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বাংলা অনুবাদে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। তার অনুবাদ করা বইগুলো যেমন "থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ," "দ্য সাইকোলজি অফ মানি," এবং "টাইম ম্যানেজমেন্ট" বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করাই তার অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, তিনি সাহিত্যিক কাজেও সমান উৎসাহী, যেখানে তার কবিতাগুলো মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার গভীর দিকগুলো তুলে ধরে। ফজলে রাব্বি প্রতিনিয়ত পাঠকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশের তার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয়, মানসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন উদ্ভাবনী প্রকাশক ও লেখক হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন