অলসতা দূর করতে ৮টি জাপানিজ নিয়ম মেনে চলো

অলসতা দূর করতে এই ৮টি জাপানিজ নিয়ম মেনে চলো

১। ইকিগাই

এর মানে হচ্ছে জীবনে একটি উদ্দেশ্য থাকা। তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করবে। ঘুম থেকে ওঠার উদ্দেশ্যই হবে নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য কিছু চেষ্টা করা। যখন তোমার একটা উদ্দেশ্য থাকবে, লক্ষ্য থাকবে, তখন তুমি আলস্য অনুভব করবে না; বরং ভেতর থেকে একটা তাড়া বা প্রেরণা পাবে।

ইকিগাইয়ের ৪টি নিয়ম:

১। যা ভালোবাসো তাই করো।

২। তুমি যে কাজে দক্ষ তাই করো।

৩। বিশ্বের দরকার এমন একটা কাজ করো।

৪। এমন একটা কাজ করো যেন এর জন্য তোমাকে প্রতিদান বা টাকা দেয়।


২। কাইযেন

এর অর্থ জীবনে অনেক বড় কোন পরিবর্তনের অপেক্ষায় না থেকে ছোট ছোট চেষ্টা দ্বারা, ছোট্ট অগ্রগতির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া। চেষ্টা করে প্রতিদিন নিজেকে ১% উন্নত করতে। একবারে বড় কিছু লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে, আমাদের উচিত জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তকে উপভোগ করা। ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করা। এভাবে যেকোন সমস্যারও মোকাবিলা করা সম্ভব। একবারে পুরো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে, সমস্যাটাকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে সেই ছোট ছোট অংশের সমাধান করা।


৩। শোশিন (Shoshin)

এটা হচ্ছে জেন বৌদ্ধদের একটি মতবাদ। এর অর্থ হচ্ছে কোন কাজ শুরু করার সময় প্রথমবারের মতো করতে যাচ্ছেন এমন মনোভাব বজায় রাখা। একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার মানসিকতা। নিজেকে সবজান্তা না ভেবে কাজের সূচনা করা। মনমানসিকতা রাখতে হবে উদার ও বিনয়ী। অজানাকে জানার সদিচ্ছা থাকতে হবে।

জেন মাইন্ড, বিগেনারে মাইন্ড বইয়ের লেখক শুনরিউ সুজুকি বলেন, তোমার মনকে রাখতে হবে খালি। সবকিছুর প্রতি মুক্তমনা হতে হবে। বিগেনারে মন বা গোড়া থেকে শুরু করার মানসিকতা হচ্ছে অনেক ধরনের সম্ভাবনা দেখা। কিন্তু অভিজ্ঞ লোকের মন শক্ত। সে আগে থেকেই দু-একটি নির্দিষ্ট পথ সম্পর্কে অভিহিত। সে আর কোন নতুন পথ দেখতে পায় না, পেলেও চায় না। তাই গোড়া থেকে শুরু করার মানসিকতা রাখতে হবে।


৪। হারা হাচি বু (Hara Hachi Bu)

এর মানে হচ্ছে পেটের ৮০ ভাগ পূরণ হয়ে গেলে আর খাবার না খাওয়া। যদি তুমি বেশি খাও, তবে তুমি ক্লান্ত অনুভব করবে। আলস্য তোমার উপর ভর করবে। বেশিরভাগ মানুষের সাথে এটাই হয়। ভরপেট খেয়ে দেয় এক ঘুম। বিশেষ করে, দুপুরের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান। কারণ ভরপেট খেলে দেহের বেশিরভাগ রক্ত ও শক্তি খাবার হজম করতে লেগে যায়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্তের স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন তুমি ঘুম ঘুম অনুভব করো। এরকম হলে তুমি কাজ করার বদলে গড়িমসি করবে।


৫। শিনরিন-ইয়োকু (Shinrin-yoku)

জাপানে শিনরিন মানে হচ্ছে বন বা জঙ্গল। আর ইয়োকু মানে গোসল। এর মানে হলো একজন মানুষকে বেশি বেশি প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো উচিত। প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকলে মানসিক চাপ কমে যায়। তাই যখনই মানসিক চাপ অনুভব করবে, তখনই প্রকৃতির মাঝে হাঁটতে বের হয়ে যাও।


৬। ওয়াবি-সাবি (Wabi-sabi)

এর অর্থ হলো সবকিছু নিখুঁত করা বা দেখার চেয়ে একজন মানুষের উচিত ত্রুটিপূর্ণ জিনিসের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে নেওয়া। সবসময় সবকিছু নিখুঁত হবে না। কিছু কিছু জিনিস নিখুঁত নাও হতে পারে। এটাকে মেনে নাও। ঠিক আছে। ত্রুটিপূর্ণ জিনিসের মধ্যেও সৌন্দর্য আছে। জিনিস যেমন সেটাকে তেমনই মেনে নাও। এর মধ্যে রয়েছে অন্যরকম এক ভালোবাসা। একগুঁয়েমি করে সেটাকে পরিবর্তন করতে যেও না। তুমি এর সৌন্দর্যকেই নষ্ট করে ফেলবে। দুনিয়ায় সবকিছুই সুন্দর, শুধু দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর দরকার।


৭। গাংবারু (Ganbaru)

জীবনে সবকিছু নিজের মনের মতো হবে, এমনটা নয়। তাই বলে হতাশ হলে চলবে কেন। ধৈর্য ধরতে হবে। ফলাফল নিয়ে আশাবাদী হতে হবে। তবে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে, সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। অনেক সময় ভুল করে হলেও কপাল গুণে অনেক ভালো কিছু তোমার সাথে ঘটে যায়। তাই নিজের ওপর আস্থা রাখো। নিজের কাজে সবটুকু ঢেলে দাও।


৮। গামান (Gaman)

এর অর্থ হচ্ছে যখন তোমার কঠিন সময় যাচ্ছে তখন ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাথে কাজে লেগে থাকো। জীবনের পথচলা সবসময় সহজ হয় না। অনেক সময় আমাদের পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়, ঝড়তুফানের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক কাজের ফলাফল আমাদের আশানুরূপ হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থও হই। তার মানে এই নয় যে জীবন শেষ হয়ে গেল। জেনে রাখবে, জীবনে চলতে গেলে বাধা আসবে, পড়ে যাবে, ব্যর্থ হবে, তবুও উঠে দাঁড়াতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


তথ্যসূত্র: The art of laziness by Library mindset, page: 63.

ফজলে রাব্বি

ফজলে রাব্বি একজন লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক, যিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে তার অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি সাফল্য প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদকের ভূমিকায় থেকে প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বাংলা অনুবাদে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। তার অনুবাদ করা বইগুলো যেমন "থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ," "দ্য সাইকোলজি অফ মানি," এবং "টাইম ম্যানেজমেন্ট" বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করাই তার অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, তিনি সাহিত্যিক কাজেও সমান উৎসাহী, যেখানে তার কবিতাগুলো মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার গভীর দিকগুলো তুলে ধরে। ফজলে রাব্বি প্রতিনিয়ত পাঠকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশের তার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয়, মানসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন উদ্ভাবনী প্রকাশক ও লেখক হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন