পরিবর্তনের ক্রমবিকাশ

 পরিবর্তনের ক্রমবিকাশ (innovation adoption curve)


পরিবর্তনকে দুইভাবে দেখা হয়। এক, পরিবর্তনকে বৈপ্লবিক ভাবে দেখা হয় (যখন কোন কিছু সম্পূর্ণ নতুন)। দুই, ক্রমবিকাশ (যখন পূর্বের ব্যাপারটিকে পরিশোধন করা হয়)। সাধারণত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের চেয়ে পরিবর্তনের ক্রমবিকাশ করা সহজ। পুরোপুরি নতুন কোন কিছু করার চেয়ে যা আছে তাই যদি বিকশিত করা হয় তাহলে লোকজন তা সহজে বুঝতে পারে। এটা অপেক্ষাকৃত সহজ। যখন কোন সংগঠনে একটি পরিবর্তনের কথা বলা হয় তখন লোকজন পাঁচভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।


উদ্ভাবনকারীরা হচ্ছে স্বপ্নচারী


যারা নতুন কোন জিনিস উদ্ভাবন করে, তারা হচ্ছে স্বপ্নচারী। তারা স্বপ্ন দেখে যে তাদের উদ্ভাবিত জিনিস মানুষের উপকারে লাগছে, মানুষের কল্যাণে লাগছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই নতুন নতুন ধারণার জন্মদাতা। সাধারণত উদ্ভাবনকারীরা নেতা বা নীতি নির্ধারক রূপে থাকে না।


প্রথম গ্রহণকারীরা হচ্ছে তারা যারা একটি ভালো ধারণা দেখলে চিনতে ও বুঝতে পারে


একটি সংগঠনে প্রথম গ্রহণকারীদের মতামতকে সম্মান জানানো হয়। যদিও তারা ধারণাটির উদ্ভাবক নয়, তবুও তারা চেষ্টা করে অন্যদেরকে এটার ইতিবাচক দিক দেখানোর। অন্যদেরকে এই ধারণা গ্রহণ করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে সকলকে পরিবর্তনের পক্ষে আনার চেষ্টা করে।


মধ্যম গ্রহণকারীরা সংখ্যায় বেশি থাকে


মধ্যম গ্রহণকারীরা অন্যদের মতামতের প্রতি সাড়া দেয়। সাধারণত তারা নতুন একটি ধারণাকে নিজের যুক্তিতে বিচার করে না; বরং লোকজন কি বলে সেই দিকেই তাদের ঝোঁক বেশি থাকে। তারা একটি সংগঠনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারীদের দ্বারা প্রভাবিত।


শেষ গ্রহণকারীরা সবার শেষে একটি ধারণা গ্রহণ করে


এরা সাধারণত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা একটি পরিবর্তনের ইতিবাচক দিক সহজে বুঝতে চায় না। যদি অধিকাংশ লোক পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয় তবে তারাও পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়।


পশ্চাদ্গামীরা সবসময়ই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে


এরা সর্বদাই পিছনের দিকে যেতে চায়, অতীত নিয়ে বাস করতে চায়। এরা একটি সংগঠনে বিভক্তি তৈরি করে। সংখ্যায় কম হলেও পশ্চাদ্গামীরা সংগঠনের জন্য মারাত্মক।


একটি সংগঠনে একটি পরিবর্তনকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে আটটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে অজ্ঞতা। প্রথমে লোকজন পরিবর্তন সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের এই অজ্ঞতা দূর করাই প্রথম কাজ। এরপর আস্তে আস্তে পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদ্ভাবন ধাপে। যেখানে লোকজন নিজেরাই স্বেচ্ছায় সংগঠনের উন্নয়নের জন্য নানা ধারণা উদ্ভাবন করে।


ধাপ ১: অজ্ঞতা। এই ধাপে অনুসারীরা কোনদিকে যাবে বুঝতে পারে না। তারা ‘অজ্ঞতার অন্ধকারে’ থাকে।


ধাপ ২: তথ্য। নতুন ধারণা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। সাধারণত দেখা যায় এই নতুন ধারণা সম্পর্কে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করে।


ধাপ ৩: গলানো। নতুন ধারণা গলতে শুরু করে। লোকজন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বা কুসংস্কারের কারণে নতুন ধারণাকে মানতে নারাজ। সাধারণত এই ধাপে লোকজনের মনোযোগ থাকে সমস্যার দিকে।


ধাপ ৪: স্বতন্ত্রদের পরিবর্তন। এই ধাপে একজন একজন করে পরিবর্তন হতে শুরু করে। এরাই হচ্ছে প্রথম গ্রহণকারী। এরা নতুন ধারণাটির ইতিবাচক দিকগুলো দেখে ও গ্রহণ করে। ব্যক্তিগত দৃঢ়বিশ্বাস দ্বারা নিজেদের অজুহাতকে দূরে সরিয়ে দেয়।


ধাপ ৫: সাংগঠনিক পরিবর্তন। দুই তরফ থেকে আলোচনা করা শেষ হয়। যে যার বক্তব্য দেয় এবং নতুন ধারণার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পরিবর্তনের ফলে যে সাময়িক অসুবিধা হবে তারচেয়ে ভবিষ্যতে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে সবাই বুঝতে পারে। অধিকাংশ লোকজন এই মুহূর্ত থেকেই পরিবর্তনের বিরোধী না হয়ে, পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করতে শুরু করে।


ধাপ ৬: বিদঘুটে পরিস্থিতি। এই সময় কিছু ব্যর্থতা ও কিছু সাফল্য পাওয়া যায়। পরিস্থিতি বিদঘুটে হলেও এই সময় লোকজন ব্যর্থতা থেকে শেখে ও সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়।


ধাপ ৭: এগিয়ে যাওয়া। বিদঘুটে পরিস্থিতির অবসান ঘটে এবং নতুন ধারণার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে। লোকজন এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার একটি চেতনা সবার মধ্যে বিরাজমান।


ধাপ ৮: উদ্ভাবন। সাফল্যের কারণে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। লোকজন নিজ উদ্যোগে কাজ করে, ঝুঁকি নেয় ও সফল হয়। বিশ্বাস ও সাহসে পূর্ণ থাকে লোকজনের হৃদয়।


যখন অষ্টম ধাপ পূর্ণ হয় তখন সংগঠন আরও সাহসী হয়ে ওঠে। তারা আবার একটি নতুন ধারণা প্রবর্তন করে এবং ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে যায়। এভাবেই একটি সংগঠন এগিয়ে যায়।

 

তথ্যসূত্র:

১। ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ। লেখক: জন সি. ম্যাক্সওয়েল। অনুবাদ: ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০১৭।

২। ছবিসূত্র: https://growenterprise.co.uk/2023/03/06/what-is-the-adoption-curve-of-innovation-and-how-does-it-work/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন