কনফুসিয়াসের দৃষ্টিতে জীবন: আত্মউন্নয়ন ও নৈতিকতার দিশা


কনফুসিয়াস ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন মহান দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং নৈতিক শিক্ষক, যার প্রকৃত নাম ছিল কুং ফু-জু। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ সালে চীনের লু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনে শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল, যা তাকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছিল। তিনি ন্যায়পরায়ণতা, পারস্পরিক সম্মান, এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

কনফুসিয়াসের চিন্তাধারা তার শিষ্যদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে "কনফুসিয়ানিজম" নামে পরিচিত হয়। তার শিক্ষা ও নীতি আজও বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।

এখানে কনফুসিয়াসের ১০টি সেরা উক্তি দেওয়া হলো:

১. “নিজের জন্য যা পছন্দ করো না, তা অন্যের উপর চাপিয়ে দিও না।”

এই উক্তিটি আমাদেরকে ন্যায়পরায়ণ ও উদার হতে শেখায়। আমরা নিজেদের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রত্যাশা করি, অন্যদের প্রতিও যেন একই আচরণ করি। এতে সম্পর্কগুলো টেকসই হয়।

২. “সত্যিকারের জ্ঞান হলো নিজের অজ্ঞতার পরিধি সম্পর্কে সচেতন থাকা।”

কনফুসিয়াস আমাদের মনে করিয়ে দেন যে নিজেকে সর্বজ্ঞানী ভাবা এক ধরনের অজ্ঞতা। জ্ঞানী ব্যক্তি নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে, যা তাকে আরও শিখতে এবং বিকাশ লাভ করতে উদ্ধুদ্ধ করে।

৩. “আমি শুনি এবং ভুলে যাই। আমি দেখি এবং মনে রাখি। আমি কাজ করি, ফলে ব্যাপারটা বুঝতে শিখি।”

এই উক্তি জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া সম্পর্কে। শুধু শোনা বা দেখাই শেখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়; নিজে কাজ করে বোঝা বা অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমেই আমরা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করি।

৪. “সবকিছুর মধ্যেই সৌন্দর্য আছে, তবে সবাই তা দেখতে পায় না।”

এখানে বলা হয়েছে, সৌন্দর্য সবখানেই বিদ্যমান, তবে সবাই তা অনুধাবন করতে পারে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সৌন্দর্য বা সুখ খুঁজে পেতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে প্রসারিত করা জরুরি।

৫. “উচ্চতর মানুষ ন্যায়ের বিষয়ে সচেতন, আর নিম্নতর মানুষ সুবিধার কথা চিন্তা করে।”

কনফুসিয়াস ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিধাবাদী আচরণের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন। উচ্চতর বা মহৎ ব্যক্তি ন্যায়-অন্যায়ের বিষয় চিন্তা করেন, কিন্তু সুবিধাবাদী মানুষ শুধু নিজের স্বার্থের চিন্তায় নিমগ্ন থাকে।

৬. “যেখানে যাও, মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ হৃদয় নিয়ে যাও।”

এখানে যেকোন কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ ও হৃদয় দিয়ে অংশগ্রহণ করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেকোন কাজ যখন আমরা আন্তরিকভাবে করি, তখন সেই কাজের ফলাফলও ইতিবাচক হয়।

৭. “আমাদের সবচেয়ে বড় গৌরব কখনো হোঁচট খাওয়া নয়, বরং প্রতিবার পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোতে।”

জীবনে পতন অনিবার্য, কিন্তু প্রতিবারই উঠে দাঁড়ানো হলো সত্যিকারের সাহস। এটা আমাদের ব্যর্থতার পরেও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে এবং জীবনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

৮. “যে শিখে কিন্তু চিন্তা করে না, সে পথ হারায়। যে চিন্তা করে কিন্তু শেখে না, সে বিপদের মুখে পড়ে।”

কনফুসিয়াস শেখা ও চিন্তা করার মধ্যে ভারসাম্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। শেখার পর চিন্তা না করলে শেখাটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়, আর চিন্তা ছাড়া শুধু শেখা একজন মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।

৯. “যে তার কাজকে নিখুঁত করতে চায়, তাকে প্রথমে তার সরঞ্জাম ধারালো করতে হবে।”

এই উক্তি প্রস্তুতির গুরুত্বের উপর জোর দেয়। যে কোনো কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি, অধ্যবসায় এবং উন্নত সরঞ্জাম বা কৌশল ব্যবহারের প্রয়োজন।

১০. “যদি নিজের হৃদয়ে তাকাও এবং সেখানে কোনো ভুল না পাও, তবে চিন্তার কী আছে? ভয়ের কী আছে?”

আমাদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস তখনই থাকে যখন আমরা জানি যে আমাদের বিবেক পরিষ্কার। মন শান্ত থাকলে চিন্তা বা ভয়ের প্রয়োজন হয় না, কারণ আমরা জানি যে আমরা সঠিক পথে আছি।

এই উক্তিগুলো আমাদের জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং আমাদের চিন্তা, আচরণ ও সম্পর্কের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য আনতে উদ্বুদ্ধ করে।

তথ্যসূত্র: https://kru-mon.com/2011/02/confucius-says-the-top-10-quotes-by-confucius/,

ফজলে রাব্বি

ফজলে রাব্বি একজন লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক, যিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে তার অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি সাফল্য প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদকের ভূমিকায় থেকে প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বাংলা অনুবাদে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। তার অনুবাদ করা বইগুলো যেমন "থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ," "দ্য সাইকোলজি অফ মানি," এবং "টাইম ম্যানেজমেন্ট" বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করাই তার অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, তিনি সাহিত্যিক কাজেও সমান উৎসাহী, যেখানে তার কবিতাগুলো মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার গভীর দিকগুলো তুলে ধরে। ফজলে রাব্বি প্রতিনিয়ত পাঠকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশের তার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাঠকদের জন্য শিক্ষণীয়, মানসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন উদ্ভাবনী প্রকাশক ও লেখক হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন